অ্যাডোবি ফটোশপ এক্সপ্রেস অ্যাপ দিয়ে ছবিতে আবহ যোগ করা যায়স্মার্টফোন
দিয়ে এখন কেবল ছবি তুললেই হয় না। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপ না
করা পর্যন্ত স্বস্তি নেই। তবে ছবি তোলার পর তা সরাসরি আপ করাও বুদ্ধিমানের
কাজ নয়। ক্যামেরায় তোলা ছবিতে অধিকাংশ সময়ই একাধিক ত্রুটি থাকে। এসব ঠিকঠাক
করতে দরকার ভালো মানের একটি অ্যাপ। যে অ্যাপে আপনি স্বচ্ছন্দ, সেটিই
ব্যবহার করুন। তবে অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস অপারেটিং সিস্টেমে চলে এমন কিছু
অ্যাপ আছে, যেগুলো আসলেই বেশ কেজো। সেসব সম্পর্কেই জেনে নিন এখানে।
স্ন্যাপসিড
গুগলের এই অ্যাপটি ডেস্কটপের ফটো এডিটরগুলোর সঙ্গে দিব্যি
টেক্কা দেওয়ার মতো। অনেক ফিচার, ইন্টারফেসও ব্যবহারকারীর জন্য খুব সহজ।
অন্য অনেক অ্যাপের মতোই ফ্রি এই অ্যাপটিতে আছে বাহারি ফিল্টার। তবে অন্য
অ্যাপে ফিল্টার সম্পাদনা করার সুযোগ থাকে না, স্ন্যাপসিডে ফিল্টারগুলো
সম্পাদনা করতে পারবেন। এমনকি নিজের মতো করে ফিল্টার তৈরিও করা যায় এতে। ফটো
এডিটরের ক্ল্যাসিক টুল যেমন: ক্রপিং, স্ট্রেইটেনিং, ফ্রেম, টেক্সট, ভিগনেট
ইত্যাদি তো আছেই। এর শার্পেনিং টুলটি কাজ করে নিখুঁত, ছবিতে কোনোরকম
গ্রেইনি ভাব থাকে না। প্রিসিশন মাস্কিং বলে একটা অপশন খুঁজে পাবেন এই
অ্যাপে। এর ফলে ছবি ডেপথ অব ফিল্ডেও সম্পাদনা করা যায়। আলোকচিত্রীরা প্রায়ই
ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করে সামনের বিষয় ফোকাসে রাখতে চান। প্রিসিশন
মাস্কিং সে কাজটিই করে দেয়।
ডেস্কটপ ফটো এডিটরের মতো সিলেকটিভ অ্যাডজাস্ট টুল আছে
স্ন্যাপসিডে। ছবির নির্দিষ্ট একটি অংশ সিলেক্ট করে স্যাচুরেশন, কনট্রাস্ট
এবং ব্রাইটনেস নিয়ন্ত্রণ করার সুবিধা দেয় এই টুলটি। এর আছে এডিট হিস্টোরি
অপশন। ফলে যে কোনো এডিট পয়েন্ট থেকে আবার পিছিয়েও যাওয়া যায়।
ভিএসসিও
ইনস্টাগ্রামের মতোই ভিএসসিও অ্যাপটির একই অঙ্গে অনেক রূপ।
ক্যামেরা, এডিটিং টুল এবং অনলাইন কমিউনিটি—সব মিলবে ফ্রি এই অ্যাপে।
অ্যানালগ ক্যামেরার মতো ফিল্টার যাঁদের পছন্দ, এই অ্যাপ তাঁদের ভালো লাগবে
নিঃসন্দেহে। ফলে ইনস্টাগ্রামের সঙ্গে বেশ ভালোই পাল্লা দিচ্ছে ভিএসসিও। এর
ফিল্টারগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় সহজিয়া স্লাইডারের মাধ্যমে। এ ছাড়া এডিটিং
টুল, যেমন: অ্যাডজাস্টমেন্ট, ক্রপিং, বর্ডার ও ভিগনেট তো আছেই। ছবির
এক্সপোজার, কনট্রাস্ট, টেম্পারেচার কিংবা স্কিন টোনও সম্পাদনা করা যায়
অনায়াসে। আর ছবি সম্পাদনা হয়ে গেলেই ভিএসসিও কমিউনিটিতে শেয়ার করা যায় আর
দশটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতোই।
প্রিজমা ফটো এডিটর
মনে আছে নিশ্চয়ই, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে গোটা বিশ্বই
প্রিজমা-জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল। প্রথমে এসেছিল অ্যাপলের আইওএসে। পরে
অ্যান্ড্রয়েডে। পয়লা সপ্তাহের মাথায় বাজিমাত। ডাউনলোড হয়েছিল ৭ দশমিক ৫
মিলিয়ন। নিয়মিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১ মিলিয়ন। বুঝতেই পারছেন,
প্রিজমার ঝকমারি কেমন ছিল। অন্য সব ফটো এডিটিং অ্যাপের রাস্তায় হাঁটেনি
রাশিয়ার এই অ্যাপ। যেকোনো ছবিতে শিল্পিত ফিল্টার দিয়ে চোখের পলকে চিত্রকর্ম
বানিয়ে ফেলতে এর জুড়ি নেই। তা-ও আবার যেনতেন চিত্রকর্ম নয়, পিকাসো কিংবা
সালভাদর দালির আঁকা ছবির মতোই হয়ে ওঠে একেকটি ছবি। ফলে শিল্পরসিক তো বটেই,
আমজনতাও এই অ্যাপের প্রেমে পড়তে বাধ্য হয় প্রথম ব্যবহারেই। আর্টিফিশিয়াল
নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেই চমৎকার এই ফিল্টারগুলোর সুবিধা দেয় প্রিজমা।
ফ্রি এই অ্যাপে আছে আরও বাড়তি কিছু ফিল্টার। সেগুলো অবশ্য কিনে নিতে হয়।
ইনস্টাগ্রামের মতোই নিজস্ব একটি অনলাইন কমিউনিটিও তৈরি করেছে প্রিজমা। এ
ছাড়া সম্পাদনা শেষে সরাসরি সেভ করার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার
কিংবা ই–মেইল করার সুবিধাও পাবেন।
অ্যাডোবি ফটোশপ এক্সপ্রেস
ছবি সম্পাদনায় অ্যাডোবি তুলনাহীন। আর অ্যাডোবির যাবতীয় ফটো
এডিটরের ছোট্ট সমগ্রই হলো এই অ্যাপ। ভাবলে একটু খটকাই লাগে। এত এত ভারী
এডিটরের সুবিধা স্মার্টফোনের অ্যাপে আসলেই মিলবে তো? সন্দেহ থাকলেও আসলেই
কাজটি করে দেখিয়েছে বিখ্যাত এই প্রতিষ্ঠান। ফোনের ছবি বাছাই করে অথবা ছবি
তুলে কিংবা অ্যাডোবি ক্রিয়েটিভ ক্লাউডে রাখা ছবি মুহূর্তেই সম্পাদনা করা
যায় অ্যাডোবি ফটোশপ এক্সেপ্রেস দিয়ে। ছবি সম্পাদনার সব ‘অস্ত্র’ই আছে
এতে—ক্রপিং, রেড-আই কারেকশন, ব্রাইটনেস, কনট্রাস্ট, স্যাচুরেশন, ফিল্টার,
বর্ডার ইত্যাদি। সবচেয়ে চমৎকার সুবিধাটি হলো স্মার্ট ফিল্টার। এই
ফিল্টারগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবির সাধারণ কিছু সমস্যা, যেমন: কালার
টেম্পারেচার কিংবা এক্সপোজারের ত্রুটি সারিয়ে দেয়। তবে এই অ্যাপটি
ব্যবহারের আগে অ্যাডোবি আইডি অ্যাকাউন্টে সাইনআপ করতে হবে।
ফুডি
আমরা তো কেবল মানুষ আর প্রকৃতির ছবিই তুলি না।
ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম ঘাঁটলেই কিছুক্ষণ পরপর চোখে পড়ে খাবারের ছবি। ফলে
অনলাইনে এই ছবিগুলো আরও লোভনীয় করে তুলতে ফুডি অ্যাপ মোক্ষম। ইনস্টাগ্রামের
মতোই সব সুবিধা আছে এতে। তবে এর ৩০টি ফিল্টার ও এডিটিং ফিচারগুলো একেবারেই
স্বতন্ত্র। এগুলো তৈরিই করা হয়েছে খাবারের ছবি সম্পাদনার বিষয়টি মাথায়
রেখে। পাখির চোখে দেখা বলে যে একটি বিষয় আছে, সে সুবিধাও মেলে এই অ্যাপে।
অর্থাৎ ‘টপ ভিউ’ থেকে চমৎকার ছবি তোলা যাবে ফুডি দিয়ে। এ ছাড়া কালার পপ বলে
একটি ফিচারও ছবিতে আনে বাড়তি জেল্লা।
0 comments:
Post a Comment